ঐকমত্য কমিশন ‘প্রতারণা’ করেছে: ফখরুল
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালা ‘প্রতারণামূলক’ অভিযোগ করে অবিলম্বে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ঐক্যমত্য কমিশন প্রনীত সুপারিশমালা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল সনদে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাতে তারা বিস্মিত।
ফখরুল বলেন, “আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তারা তাদের রিকমন্ডেশন দিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে…প্রধান উপদেষ্টার সইও আছে সেখানে…তিনিও এই কমিশনের চেয়ারম্যান। এখন অবাক বিস্ময়ে আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি যে, আমরা খুব একেবারে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম না…আমরা সেখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলাম। সেই নোট অব ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের)।
“কিন্তু অবাক বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম যে, কালকে (বুধবার) যখন তারা এটা প্রকাশ করলেন সেই নোট ডিসেন্টগুলো নেই…পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে…ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশন আমি বলব জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা এবং আমি বলব যে এগুলো অবিলম্বে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।”
এ ব্যাপারে কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-ওয়াদাবদ্ধ যে আপনি (বাংলাদেশে) এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার সেই সংস্কারগুলো করে আপনি একটা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটা নির্বাচন দেবেন…সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পার্লামেন্ট আসবে সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে।
‘‘আজকে যদি এর থেকে যদি কোনো ব্যতয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি আপনি যান তার দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই (প্রধান উপদেষ্টা) বহন করতে হবে…এ কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই। সেজন্যই আমি আশা করব যে, তারা তাদের (জাতীয় (ঐকমত্য কমিশন) এই উপলব্ধি আসবে এবং অতি দ্রুত এই সংস্কার কমিশন সকল দলগুলোর মধ্যে, যে গুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং যে গুলোতে দ্বিমত করেছি সবকিছুকে নিয়ে একটা নির্বাচন আপনি অবিলম্বে দেবেন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে পারব, জনগণের শাসন আমরা দেশে নিয়ে আসতে পারব।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাংবাদিক এহসান মাহমুদের রচিত ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন : অন্তবর্তী আমলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশমালা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নিয়ে ঐকমত্য হলেও সেই ভোট কখন হবে তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। জামায়াত চায়, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নভেম্বরেই গণভোট করা হোক।
তাদের এই দাবির মধ্যে ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছে বিএনপি। তাদের দাবি গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করারই সব দিক দিয়ে যৌক্তিক।
No comments