টানা দুই মাস রপ্তানি কমে, সেপ্টেম্বরে আয় ৩৬২ কোটি ডলার
দেশের রপ্তানি আয় টানা দুই মাস ধরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৬২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। এর আগে আগস্ট মাসেও রপ্তানি আয় কমেছিল ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ ডলার, যা এই বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে।
সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক (রেডিমেড গার্মেন্টস–RMG) সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ কোটি ডলার কম আয় হয়েছে।
উপখাতভিত্তিক হিসেবে, নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই খাতের পতনই সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "তৈরি পোশাক খাতে মন্দা দেখা দিয়েছে, কারণ অনেক ক্রেতা এখন নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না। তারা ২০ শতাংশ অতিরিক্ত পারস্পরিক শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন।"
তিনি আরও বলেন, "এই অতিরিক্ত খরচ রপ্তানিকারকদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তারা আগেই শুল্ক সমন্বয়, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার চাপে রয়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এইসব বাজারে প্রবেশ করছে।"
হাতেম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে, রপ্তানি খাত পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করছি।"
প্রধান রপ্তানি খাতগুলোতে পতন দেখা দিলেও কিছু প্রাথমিক পণ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ১২ দশমিক ০১ শতাংশ (চিংড়িতে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ, কাঁকড়ায় ১১৫ শতাংশ)। এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫৮ লাখ ডলার বেশি।
সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সবজি রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। ফলমূল রপ্তানিতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে—৯৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ—যার আয় ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তবে চা, চিনি ও তেলজাত পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে।
অন্যান্য উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ডলার, যার মধ্যে চামড়াজাত পণ্যের আয় ৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৩২ শতাংশ বেশি।
ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যেখানে বৈদ্যুতিক পণ্য ও সাইকেল রপ্তানির অবদান উল্লেখযোগ্য। মানব চুল রপ্তানি বেড়েছে ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তবে সেরামিক (-১০.২৬%), গ্লাসওয়্যার (-৩৪.৪৮%), ফার্নিচার (-১৪.২৯%) এবং অন্যান্য ফুটওয়্যার (-১৪.৮১%) খাতে আয় কমেছে।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক পণ্যে সামান্য প্রবৃদ্ধি (+১.৩৯%) দেখা গেলেও উৎপাদিত পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর ফলে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে।
সবশেষে, যদিও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক রয়েছে, সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক খাতের পতন পুরো রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। তবুও মাছ, ফল, সবজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক চিত্রে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

No comments