ড. ইউনূসকে হয়রানির কারিগর এনএসআই কর্মকর্তা আমিনুল হক পলাশ, কে এই পলাশ
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই)-এর উপপরিচালক আমিনুল হক পলাশকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অন্যতম কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আমিনুল হক পলাশ আগে বুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে এনএসআইতে যোগ দেন ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট সহকারী পরিচালক হিসেবে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে দ্বিতীয় সচিব (কনস্যুলার অ্যাটাশে) হিসেবে প্রেরণ করা হয়।
তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম জোবায়েরের নির্দেশে তিনি এবং অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমান ড. ইউনূসকে কেন্দ্র করে মামলা প্রক্রিয়া চালানোর দায়িত্ব পান। মামলার ধরন নির্ধারণ, সাক্ষী নির্বাচন, অভিযোগকারী তৈরি, গ্রামীণ ব্যাংক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মীদের ব্যবহার, এমনকি আইনজীবী নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তাদের সম্পৃক্ততা ছিল। আদালতে ড. ইউনূসকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য লিফট বন্ধ করে সিঁড়ি ব্যবহার করানো বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে কলকাতা মিশন থেকে আমিনুল হক পলাশ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এবং পরবর্তীতে লন্ডনে অবস্থান শুরু করেন। লন্ডনে গিয়ে তিনি টেলিভিশন টকশোতেও অংশ নিচ্ছেন। ৩ নভেম্বর ২০২৪ তাকে তলব করা হলেও তিনি হাজির হননি। অভিযোগ রয়েছে, কলকাতা থেকে পালানোর সময় তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করেননি; বরং অবৈধভাবে রাখা সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে ব্রিটিশ ভিসা নিয়েছিলেন। যদিও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীর অন্য কোনো পাসপোর্ট রাখা আইনবিরোধী। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়।
এনএসআই জানিয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে তিনি রাজনৈতিক ও শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমেও জড়িত ছিলেন। ৩ নভেম্বর দেশে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তিনি আর ফেরেননি। ৬০ দিনের বেশি সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে পলাতক ঘোষণা করা হয় এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ড. ইউনূসের আইনজীবীদের অভিযোগ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার মামলা দিয়ে এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে ড. ইউনূসকে হেয় করেছেন। তিনি বলেন, আদালত ভবনের লিফট বন্ধ করে তাকে বারবার উচ্চ তলায় হাঁটিয়ে ওঠানো হয়েছে—যা অন্য কারও ক্ষেত্রে ঘটেনি।
ব্যারিস্টার মামুনের দাবি, এসব মামলা ছিল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগকে বিতর্কিত করা। তিনি আরও বলেন, মামলাগুলো ছিল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার প্রতিফলন, আর গোটা বিশ্ব এ হয়রানি প্রত্যক্ষ করেছে। বহু আন্তর্জাতিক মহল ও খ্যাতিমান ব্যক্তি শেখ হাসিনার এই আচরণের নিন্দা করেছিলেন।
সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকেই শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠেন। ফলে তাকে সীমাহীনভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়, যা বিশ্বে বিরল ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ রাজনৈতিক মামলায় আসামিদের আদালতে লোহার খাঁচায় নেওয়া হয় না, কিন্তু ড. ইউনূসকে বিশেষভাবে অপমান করার জন্য আদালতে খাঁচায় ঢোকানো হয়েছিল—যা প্রতিহিংসার চরম উদাহরণ।

No comments